Saturday, May 11, 2013



ভাষাসংগ্রাম কি শুধুই এক সঙ্কীর্ণ আঞ্চলিক দেশপ্রেমজাত সাধারণ ঘটনা বলেই আধিপত্যবাদিদের দৃষ্টিতে উপেক্ষিত থেকে যাবে ? নিশ্চয়ই না । ইতিহাস ক্ষমতার পক্ষে দাঁড়িয়ে এমন অবমাননাকর আখ্যা দিয়ে ভাষাশহিদদের আত্মত্যাগের সঙ্গে যুক্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের ত্যাগ ও সংগ্রামী চেতনাককে অবজ্ঞা করা চলে না- এক ধৃষ্টতা মাত্র । ইতিহাস তা সমর্থন করে না । কাছাড়ের জনৈক পুলিশ কর্মকর্তা মারফত রাজ্যপাল জেনারেল শ্রী নাগেশের প্রেরিক শোকবার্তা যা হাতে এলে শহিদ পরিবারের লোকেরা সেদিন ঘৃণাভরে তা চিতার আগুনে নিক্ষেপ করেন, সেই বার্তা কি এই বার্তা দেয় না যে এই আন্দোলন নিছক এক আঞ্চলিক সঙ্কীর্ণতাবাদী আন্দোলন ছিল না ?
 প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যনির্বাহক সমিতি ও আসাম রাজ্য সরকার উভয়ই সরকারি ভাষা সংক্রান্ত আইনের ৫ নম্বর ধারায় বর্ণিত মহকুমা পরিষদ সংক্রান্ত বিধিটি যা কি না ‘‘At the advice of the Prime Minister and the union Home Minister’’ ,বাদ দিতে হলে তার কি কোন সর্বভারতীয় গুরুত্ব ছিল না ? ১৯৫০ সনে যখন সর্বস্তরে অসমিয়া করণের প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসেবে অন-অসমিয়া ভাষিক অঞ্চলে রেলস্টেশনের নাম পরিবর্তন করে অসমিয়া করার প্রচেষ্টা চলেছিল তখন তার বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদের ফলে ভারতীয় রেলকর্তৃপক্ষের নির্দেশে তা স্থগিত রাখতে বাধ্য করা হয় (Vide letter No./AR153-PG,dated 19.8.50,from the chief Administrative Officer,Assam Railway,Pandu,to the Chairman,Local Board,Silchar. )
   ভারত সরকার কি তখন অসমিয়াকরণের এই উদ্দেশ্যকে সঙ্কীর্ণ আঞ্চলিকতাবাদের দৃষ্টিতে দেখে নি ? ভাষা সমস্যা সমাধানের দাবিতে কাছাড় জেলা কংগ্রেস কমিটির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক ও শাস্ত্রী-সূত্রের পূর্ণ প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে দেবার উদ্দেশ্যে ভাষা আন্দোলন আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত যেদিন গৃহীত হয়েছিল সেদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সংগ্রাম পরিষদ ও কংগ্রেস কমিটির প্রতিনিধিদল কর্তৃক উত্থাপিত অভিযোগ ও দাবি দাওয়াগুলির যৌক্তিকতা স্বীকার করে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ভাষা সমস্যার সমাধানসূত্র এবং দক্ষিণাঞ্চল পরিষদ কর্তৃক গৃহীত নীতির পরিপ্রেক্ষিতে আরো আলোচনা সাপেক্ষে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নীতি নির্ধারণের পূর্ব পর্যন্ত সংগ্রাম পরিষদকে ধৈর্য ধারণ করার যে অনুরোধ জানিয়ে ছিলেন তার কি সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ভাষা জনিত কোনো প্রেক্ষিত কিংবা প্রাসঙ্গিকতা ছিল না ? ‘দুর্জনের ছলের অভাব হয় না’– তাই ভাষা সংগ্রামের মূলশক্তিকে ‘আঞ্চলিক দেশপ্রেম’ বলে অবমাননা করার সাহস দেখিয়েছে মিথ্যা ছলনায় । এমন আজগুবি তথ্যের খণ্ডন করা যুক্তিতর্ক দেখিয়ে হবে ? মনে হয় না । কেন্দ্রের প্রত্যাখ্যানের পেছনে রাজ্যের কলকাঠি অবশ্যই নড়েছে । আমরা ভুক্তভোগী, তাই আর সময় নষ্ট না করে আমাদের কর্তব্য হবে ১৯৬১ সালের এপ্রিল থেকে ধারাবাহিক চলে আসা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামকে বৃহত্তম আকারে সংহত শক্তিতে পরিণত করে দেশবাসীর কাছে অন্যায়ের বিচার চেয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া । আমরা ভিক্ষে চাই না চাই ন্যায্য অধিকার ও আত্মসম্মান । আমরা অবশ্যই শহিদদের ঠিকানায় আমাদের নিজস্ব ভুবনকে খুঁজে নিতে পারব। গৌরবের উনিশে মে’র বর্ষারম্ভে এই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা । 
                                 

(সৌজন্য - বর্ণমালার রোদ্দুর )